হাওরের পানি দূষণ করলে ৫ বছরের জেল
২ ঘন্টা আগে শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ‘হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন’ শীর্ষক একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। হাওর বা জলাধারের পানি দূষণ করলে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়ায়। অপরাধীর সহায়তাকারীও পাবেন একই শাস্তি।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য হাওর ও জলাভূমিসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর ১৬৮৩/২০১৪-তে দেওয়া আদেশে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন দ্রুত প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী এ আইনের খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। খসড়াটি তারা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
খসড়ার বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত চেয়েছিল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এজন্য ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেশ কিছু মতামত এসেছে। যা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। তারপর এটি মন্ত্রিসভায় উঠবে।
আরও পড়ুন >> পানিশূন্য তিস্তাপাড়ে কর্মহীন হাজারো জেলে-মাঝির দুর্দিন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা, আইসিটি) গাজী মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে কমিটি করা হয়েছিল। এরপর সবার সমন্বয়ে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় তার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে পরবর্তী যা যা প্রক্রিয়া আছে সেগুলো শেষ করবে।
তিনি বলেন, মূলত হাইকোর্টে একটি মামলার রায়ের আলোকে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল আইন করার জন্য। সে আলোকে মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠি দিয়েছিল। এরপর খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে।‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে হাওরাঞ্চল যেভাবে আছে সেটাকে রক্ষা করতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সেই আলোকেই আইনটি হচ্ছে’— বলেন গাজী মিজানুর রহমান।
‘বিশ্ব জলাভূমি দিবসের স্লোগান হচ্ছে, যেসব জলাভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে যেগুলো আছে সেগুলো বজায় রাখতেই হবে। সে আলোকে আইনের খসড়ায় আমরা সব বিষয় নিয়ে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি গেজেটের মাধ্যমে। আইন না থাকায় অনেক বিষয়ে সমাধানে আসা যাচ্ছিল না। বর্তমানে মৎস্য সম্পদ থেকে শুরু করে কৃষি সম্পদসহ অনেক কিছু মিলিয়ে হাওরাঞ্চল বিশাল সম্ভাবনাময়। কিন্তু আইন না থাকায় কিছু কাজ জোরালোভাবে করা যাচ্ছিল না। আইনটি পাস হলে হাওরাঞ্চল আরও সুরক্ষিত হবে বলে আমরা আশা করছি।’
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মেহরুবা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর খসড়াটি তৈরি করেছে। খসড়ার বিষয়ে আমরা স্টেকহোল্ডারদের মতামত চেয়েছিলাম। এজন্য ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা সময় দিয়েছিলাম। কিছু মতামত এসেছে। আমরা সেগুলো কম্পাইল করছি।’
আরও পড়ুন >> আশীর্বাদের তিস্তা এখন অভিশাপ
যেসব মতামত এসেছে সেগুলো নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে এসব মতামত নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে— যোগ করেন তিনি।
কী আছে আইনের খসড়ায়
হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা বলতে বোঝাবে-
(ক) হাওর ও জলাভূমির জরিপ, তালিকা প্রস্তুত, সীমানা চিহ্নিতকরণ ও জলাভূমি এলাকার মানচিত্র প্রস্তুত করা।
(খ) হাওর ও জলাভূমি এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল, জলজ বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষার জন্য অভয়াশ্রম বা স্থায়ী অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা; সংরক্ষিত জলাভূমি এলাকা ঘোষণা এবং হাওর ও জলাভূমি সংস্কার, খনন, পুনঃখনন ও পুনরুদ্ধার।(গ) হাওর ও জলাভূমির পানির অন্তঃপ্রবাহ বা আন্তঃপ্রবাহ বা বহিঃপ্রবাহ অব্যাহত রাখার জন্য খনন বা পুনঃখনন।
(ঘ) পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং হাওর ও জলাভূমির টেকসই ব্যবহার।
(ঙ) হাওর ও জলাভূমির উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র উন্নত করার জন্য হাওর ও জলাভূমির যে কোন ধরনের পরিবর্তন।
(চ) হাওর ও জলাভূমির উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল এবং জলজ পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষা করে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন।
হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা বলতে নিম্নবর্ণিত কাজ থেকে বিরত থাকা বোঝাবে-
(ক) হাওর ও জলাভূমি থেকে এমনভাবে পানি প্রত্যাহার যার ফলে হাওর ও জলাভূমি শুকিয়ে যায় বা হাওর ও জলাভূমি এলাকার পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র বা জলজ প্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(খ) পানিধারক স্তরের নিরাপদ সীমা ব্যাহত হয় এমনভাবে পানি উত্তোলন/আহরণ।
(গ) পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কাজ।
(ঘ) হাওর ও জলাভূমির যে কোনো ধরনের পরিবর্তন যার ফলে হাওর ও জলাভূমির পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(ঙ) হাওর ও জলাভূমিতে এমন কোন অবকাঠামো নির্মাণ যা পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং যার ফলে হাওর ও জলাভূমির পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(চ) হাওর ও জলাভূমিতে এমন কোনো দ্রব্য, পয়ঃ বা গৃহস্থালি বর্জ্য নিক্ষেপ বা মিশ্রণ বা নিঃসরণ যার ফলে পানি দূষিত হয় বা হাওর ও জলাভূমির পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(ছ) শিল্প কারখানার অপরিশোধিত তরল বা কঠিন বর্জ্য হাওর ও জলাভূমিতে নিক্ষেপ বা মিশ্রণ বা নিঃসরণ যার ফলে পানি দূষিত হয় বা হাওর ও জলাভূমির পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(জ) অভয়াশ্রম হিসাবে ঘোষিত হাওর ও জলাভূমি এলাকায় পানি বা শব্দ দূষণ সৃষ্টিকারী যান্ত্রিক জলযান চালানো।
আরও পড়ুন >> টাঙ্গুয়ার হাওর : স্বর্গীয় জলজ সৌন্দর্যের আধার
(ঝ) অনুমোদিত বালুমহাল বা পাথরমহাল ব্যতীত হাওর ও জলাভূমি থেকে বালু বা পাথর উত্তোলন।
(ঞ) হাওর ও জলাভূমির অবৈধ দখল, ভরাট বা অননুমোদিত খনন।
(ট) হাওর ও জলাভূমি থেকে অবৈধভাবে সম্পদ আহরণ।
(ঠ) হাওর ও জলাভূমির অননুমোদিত পরিবর্তন বা রূপান্তর
(ড) প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ঘোষিত জলমহাল ইজারা প্রদান।