অস্ত্র-গুলিসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী শহিদুল গ্রেপ্তার

Bortoman Protidin

২ ঘন্টা আগে রবিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৫


#

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যাকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে র‍্যাব-৭–এর একটি বিশেষ দল তাকে আটক করে।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসাইন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।

র‍্যাব ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চুরি ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন শহিদুল। ভিড়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা লাগিয়ে মানুষের কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়াই ছিল তার প্রাথমিক কৌশল। পরবর্তী সময়ে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন তিনি এবং প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন একটি সশস্ত্র বাহিনী।

চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত শহিদুলের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকসহ কমপক্ষে ২০টি মামলা রয়েছে। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর একাধিক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে উঠে এসেছে, তার একটি নিজস্ব *‘টর্চার সেল’*ও ছিল।

চাঁদা না দিলে গুলি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, চাঁদার টাকা না পেলে শহিদুল ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করত। গত ৪ অক্টোবর পাঁচলাইশের বাদুড়তলা এলাকায় একটি গ্যারেজের সামনে তার সহযোগী মুন্নার গুলি চালানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এর আগেও গত বছরের ১০ নভেম্বর চান্দগাঁও থানার কাছাকাছি একটি মোটর গ্যারেজে চাঁদা না পেয়ে শহিদুল নিজেই গুলি চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় গ্যারেজ মালিকের কাছে প্রথমে ২০ লাখ টাকা এবং পরে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল বলে জানান ভুক্তভোগীরা। একই বছরের ১৯ অক্টোবর এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনাতেও শহিদুল ও তার সহযোগীদের নাম উঠে আসে।

৩০ সদস্যের বাহিনী, রয়েছে বিদেশি অস্ত্র

পুলিশ ও র‍্যাব জানায়, শহিদুল প্রায় ৩০ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, যারা মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে সক্রিয় ছিল। তার একাধিক সহযোগী বিভিন্ন মামলার আসামি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করতে পারেনি শহিদুলের কাছে মোট কত অস্ত্র রয়েছে। তবে গত অক্টোবর মাসে তার সহযোগীদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধারের তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে তার বাহিনীর হাতে অস্ত্র দেখা যায়।

‘টর্চার সেলে’ পাওয়া যায় লুট হওয়া গুলি

চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট এলাকার একটি ভবনকে শহিদুল তার নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেখানে অভিযান চালিয়ে আগেও তার বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে উদ্ধার হওয়া কিছু গুলি ও খোসা থানার কাছ থেকে লুট হওয়া বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

সেসময় পুলিশ জানায়, যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাত, তাদের ওই নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করা হতো। সেখানে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ও নজরদারির সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

মেশিনে গণনা হতো চাঁদার টাকা

আরও জানা গেছে, শহিদুলের বাহিনী চাঁদাবাজি ও মাদক বিক্রির টাকা দ্রুত হিসাব করতে ব্যাংকে ব্যবহৃত টাকা গণনার যন্ত্র ব্যবহার করত। এক অভিযানে ওই যন্ত্রসহ নগদ অর্থ ও মাদক উদ্ধার করে পুলিশ।

শহিদুল ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার বাসিন্দা। পড়াশোনা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবি ও ভিডিও থাকলেও কোনো আনুষ্ঠানিক পদে ছিলেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাটি নিয়ে চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন  
Link copied