২৫ বছরের কর্মজীবনে এক দিনও ছুটি নেননি শিক্ষক জয়নাল আবেদিন
৬ দিন আগে শুক্রবার, নভেম্বর ৮, ২০২৪
জীবনের পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে। তাদের ভালোবাসার টানে ২৫ বছরের কর্মজীবনে সরকার নির্ধারিত ছুটির বাইরে এক দিনও অনুপস্থিত ছিলেন না। ঝড়-বৃষ্টি ও অসুস্থতা যাই হোক না কেন, মাদরাসায় আসেননি এমন রেকর্ড নেই। আর কিছুদিন পরেই অবসরে যাবেন তিনি।
ব্যতিক্রমী এই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন। তিনি উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ধামঘর গ্রামের মৃত ওয়াছি উদ্দিন খাঁনের ছেলে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের শুশুন্ডা ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
১৯৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে জয়নাল আবেদীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মুরাদনগর উপজেলার শুশুন্ডা ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায়। তবে চাকুরিতে বেতনভূক্ত হন ১৯৯৪ সালে। পরে ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ চলে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন কর্মজীবনে কখনো ফাঁকি দেবেন না। সে অনুযায়ী কাজ করতে করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হয়ে ওঠে তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন ২০০৫ সাল পর্যন্ত, এরই মধ্যে মাদরাসায় দাখিল বিভাগ (এসএসসি সমমান) চালু করতে সক্ষম হন তিনি।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমরা গর্ববোধ করি স্যারের কাছ থেকে কিছুটা হলেও শিখতে পেরেছি। স্যার পড়াশোনার পাশাপাশি সবসময় আমাদেরও মাদরাসা বন্ধ না করতে উৎসাহিত করতেন।
অপরদিকে এমন একজন ব্যক্তিকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে গর্বিত অন্য শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন শিক্ষক সমাজের জন্য অনুকরণীয়।
শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মূলত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করার সময় প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এতটাই মনোযোগী হয়েছিলাম যে ছুটি কী জিনিস সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব ছেড়েছি ঠিকই, প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, তা আর ছাড়তে পারিনি। তাই সে ভালোবাসার টানে মাঝেমধ্যে রাতে শরীরটা অসুস্থ হলেও সকালে মাদরসায় যাওয়ার কথা ভাবতেই নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ মনে হতো। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি এখন এতটাই মায়ায় পরেছি, চাইলেই এখানে না এসে থাকতে পারি না।
এ বিষয়ে শুশুন্ড ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, জয়নাল আবেদীন সাহেব চাইলেই অন্য শিক্ষকদের মতো প্রতি বছর ২১ দিন করে ছুটি কাটাতে পারতেন। অথচ দীর্ঘ ২৫ বছরে তার পাওনা ৫২৫ দিন ছুটি নেননি তিনি। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। তিনি শিক্ষক সমাজের গর্ব।