জন্মান্ধ ব্যক্তি করল ২শতাধিক ঘরের ইলেকট্রিক কাজ,অন্ধত্ব জয়ের গল্প

Bortoman Protidin

২৬ দিন আগে সোমবার, জানুয়ারী ২০, ২০২৫


#

মোঃ সুমন ভূঁইয়া, নোয়াখালী:



নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরহাজারী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের তের বাড়ি সমাজের মরহুম আব্দুস সোবহানের ছেলে ইমরোজ হোসেন রিপন (৩৬)। সে একজন জন্মান্ধ যুবক।

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধাই নয়, এমনটা প্রমাণ করতে যেন তার লড়াইটা জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু। মনের আলোয় উদ্ভাসিত এ যুবক পেশায় একজন ইলেকট্রিক ও প্লাম্বার মিস্ত্রি। পাশাপাশি বাড়ির পাশে করছেন ছোট্র একটি ইলেকট্রিক দোকান। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে হাত না পেতে করছেন ইলেকট্রিক ও পাইপ ফিটারের কাজ। স্থানীয় এলাকাবাসী তার এমন প্রয়াসে অনুপ্রাণিত। সে যেন নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই।

 

১৯৮৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন রিপন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। বর্তমানে তার মা দুই ছেলের সাথে আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকা প্রবাসী বড় বোন সুমনা ও ডাক্তার শাহজান আক্তার এবং ছোট ভাই শিপনের সহযোগিতায় বাবার দিয়ে যাওয়া ঘরে এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছে রিপন।

 

নিজ গ্রামে বিদ্যুতায়ন শুরু হলে নিজের মধ্যে ইলেকট্রিকের কাজ শেখার স্বপ্ন জাগে। কিন্তু এতে বাধা দেন মা-বাবাও স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা। এরপর একা একা নিজেদের বসত ঘরে ইলেকট্রিকের কাজ শিখতে চেষ্টা চালায় রিপন। একপর্যায়ে এ নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে তার মা-বাবা। এ কারণে ইলেকট্রিকের কাজ করার যন্ত্রপাতি লুকিয়ে রাখতেন। পরে ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে যান। সেখানে একাকী দীর্ঘ চেষ্টার পর আয়ত্ত করে ইলেকট্রিক, প্লাম্বার ও সোলারের কাজ। এরপর তিনি গত ১৮ বছরে নিজ গ্রামে বেশ কয়েকটি মসজিদসহ ১৫০-২০০টি ঘরের ইলেকট্রিক কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়াও টুকিটাকি অসংখ্য মেরামতের কাজ করেছেন।

 

নিজের গ্রামের সকল রাস্তার সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক। কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। একা একা যান নিজের দোকানে। গোসল থেকে খাবার সবই করেন নিজে হাতে কারো সাহায্য ছাড়া। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি রিপন।

 

রিপনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, স্বামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে সে পুরোপুরি আলাদা। সে নিজের সকল কাজ নিজে করতে পারে।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাধা নয় তার উজ্জল দৃষ্টান্ত রিপন।  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম কাজের পিছনে ছুটে চলেছেন। দৃষ্টি তার সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো সে এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী রিপন কারো বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তার এ উদ্যম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা। তাকে খুব দ্রুত একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।

 

global fast coder
ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন  
Link copied